বাঙালির নববর্ষ আজ

১৪২৬ বঙ্গাব্দের শেষ দিন চৈত্রসংক্রান্তি ছিল গতকাল। আজ থেকে শুরু হচ্ছে নতুন বছর ১৪২৭ বঙ্গাব্দ। বর্ষবরণের দিন পহেলা বৈশাখ আজ (১৪ এপ্রিল)। মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে জনসমাগম এড়ানোর জন্য বাংলাদেশে বর্ষ বিদায় ও নববর্ষ বরণের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

Art students Bangladesh

Getty: Dhaka University Art Institute students paint the wall in front of art institute building for colorful preparation to celebrate Bengali New Year, 2016 Source: Getty Images

বাংলাদেশে নাগরিক জীবনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরোধা সংগঠন ছায়ানট তাদের ঐতিহ্যবাহী রমনা বটমূলের প্রভাতি অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। তবে রমনা বটমূলের বিগত কয়েক বছরের অনুষ্ঠানগুলোর ভিত্তিতে একটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রচার করবে।

১৯৬১ সালে যাত্রা শুরু করা ছায়ানট ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের ভোরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এর আগে মাত্র একবার মুক্তিযুদ্ধকালে অনুষ্ঠানটি হয় নি। এবার দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারণে।

বাংলা বর্ষবরণের আরেক ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠানকে জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনেসকো অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ অনুষ্ঠানও এবার বাতিল করা হয়েছে। তবে রীতি অনুসারে প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা বর্ষবরণের পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। এটি ভার্চুয়ালি প্রকাশিত হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ বাণীকে এবারের বর্ষবরণের মূল প্রতিবাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পোস্টারের মূল প্রতিপাদ্যের পাশাপাশি এবার এর ব্যাখ্যাও যুক্ত করা হয়েছে। এ জন্য আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ থেকে ‘মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায় না’—লাইনটি ব্যবহার করা হয়েছে।
There was no event including traditional event ‘Mongol Shovajatra’ this year due to COVID 19 measures in Bangladesh on Bangla New Year.
There was no event including traditional event ‘Mongol Shovajatra’ this year due to COVID 19 measures in Bangladesh on Bangla New Year. Source: Faculty of Fine Art, University of Dhaka
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ঋষিজসহ অন্যান্য সব সংগঠনও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।

পহেলা বৈশাখে দেশীয় নতুন পোশাক পরে, বাঙালি খাবার খেয়ে ঘুরে বেড়ানো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শাহবাগের আজিজ মার্কেটসহ দেশীয় বুটিক হাউসগুলোতে রীতিমতো ভিড় থাকত এ সময়টিতে। এমনকি দরিদ্র মানুষও নতুন পোশাকের জন্য ভিড় করত ফুটপাতের দোকানগুলোতে। কিন্তু করোনার কারণে সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করায় এবং নাগরিকদের যার যার ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দেওয়ার কারণে আজিজ মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাতে এখন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। এবার বর্ণিল পোশাক পরা প্রাণোচ্ছল মানুষের ঢল নামবে না রাজপথে, বিনোদনকেন্দ্রে কিংবা অনুষ্ঠান মঞ্চে। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে যে অর্থনীতির চাকা ঘোরে, এবার তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাহাকার বিরাজ করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলা নববর্ষের সব আয়োজন এবার মাটি হয়ে গেছে। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন স্বর্ণ, মনোহারি ও কাপড়সহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পুরনো বছরের হিসাবনিকাশ হালনাগাদ করে নতুন করে হিসাবের খাতা খোলেন, যাকে বলা হয় ‘হালখাতা’। বাংলা সনের প্রথম দিনটিতে ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্যবাহী আয়োজন ‘হালখাতা’ এবার হচ্ছে না। ‘লকডাউন’ পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় কোথাও এবার হালখাতা খুলছেন না ব্যবসায়ীরা। অবশ্য যুগের পরিবর্তনে হালখাতার ঐতিহ্য অনেক আগেই আবেদন হারিয়েছে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় ব্যবসায়ীরা পুরনো রীতি মেনে চলার চেষ্টা করলেও এবার করোনাভাইরাস তা আর হতে দিচ্ছে না।

নিষেধের ঘেরাটোপে আটকে থাকা মানুষ আজ ঘরে থেকেই আবাহন করবে নতুন বছরকে।

আজকের এই বিশেষ দিনে সবার একটাই চাওয়া, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বিশ্ব করোনাভাইরাসমুক্ত হোক। জীবনকে খুঁজে পাক নতুন আনন্দে। নতুন বছরে এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা। শুভ নববর্ষ।

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 14 April 2020 12:24pm
By Ali Habib
Presented by Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends