রোহিঙ্গা সঙ্কটে সাড়া দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করলো অস্ট্রেলিয়া

গত এক বছর ধরে গৃহহীন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে অস্ট্রেলিয়া।

UN Secretary-General Antonio Guterres at a Security Council meeting.

UN Secretary General Antonio Guterres has urged the Security Council to help the Rohingya. Source: AAP

আগস্টের শুরুর দিকে (৬-৯ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ান সংসদ সদস্যদের সাত জনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কক্স বাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়-শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তারা।
Shayne Neumann
Hon Shayne Neumann MP Source: AAP
ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনের এক বিবৃতিতে অস্ট্রেলিয়ার শ্যাডো মিনিস্টার ফর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন, বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি শ্যেন নিউম্যান এর বরাতে বলা বলা হয়েছে,

বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে সহায়তা করছে।

বিবৃতিটিতে আরও বলা হয়,

রোহিঙ্গা সংকট আমাদের অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মানবিক জরুরি অবস্থা। সেখানে লাখ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছে। বেশিরভাগ নারী ও শিশু যৌন ও লিঙ্গগত সহিংসতার শিকার হয়েছে। তারা নিজেদের পরিবার হারিয়েছে এবং নূন্যতম মানবিক চাহিদাও পূরণ করতে পারেনি।

রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া স্থিরমনা। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচারের প্রাপ্তির দাবি জানিয়ে আসছে দেশটি। অপরাধীদের অবশ্যই আইনের আওতায় আসতে হবে। সেজন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন এবং তাদের স্বতন্ত্র তদন্তে সমর্থন জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

রাখাইনে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোকে প্রবেশের অধিকার দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানায় অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া কফি আনানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাখাইন রাজ্যে তার পরিচালিত অ্যাডভাইজরি কমিশনের পরামর্শগুলো মেনে চলার আহ্বান জানানো হয় বিবৃতিতে।

এদিকে মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করেছে।
Aung San Suu Kyi (left) has been criticised for staying silent on the UN report on the Rohingya genocide.
Aung San Suu Kyi (left) has been criticised for staying silent on the UN report on the Rohingya genocide. Source: AAP
গত ২৭ আগস্ট সোমবার জাতিসংঘের ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যায় দায়ে দেশটির জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে এটি করেছে মিয়ানমার।

প্রতিবেদনটিতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে বলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উঠেছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাংসহ অন্য ছয় শীর্ষ সেনা জেনারেলকেও বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানানো হয় জাতিসংঘের ওই প্রকাশিত প্রতিবেদনে। তদন্তকারীরা ৮৭৫ জন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এমনকি উপগ্রহের ছবি ও ভিডিও পর্যালোচনা করে তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তর ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
File image of Rohingya Muslims carry their young children over water.
A senior UN human rights official says Myanmar's "ethnic cleansing" of Rohingya Muslims is ongoing. Source: AAP
বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘রাখাইনে যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার সহায়ক পরিবেশ তৈরি না করছে, সেখানে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা ফেরত যাবে না।’ তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে মিয়ানমার কাজ করতে দিচ্ছে না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য জাতিসঙ্ঘের এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানালেও চীন এটিকে ভালোভাবে গ্রহণ করে নি।

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যদেশ দ্বিধাবিভক্ত থাকয় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারি নি।

২৮ আগস্ট মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আয়োজিত এক উন্মুক্ত বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, মিয়ানমার যত যুক্তিই দেখাক না কেন, সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকারের লঙ্ঘন করেছে, কোনো যুক্তি দিয়েই তা ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করা যাবে না।

তবে, অধিকাংশ বক্তাই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

পরিষদের সভাপতি যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ-বিষয়ক মন্ত্রী তারিক মাহমুদ আহমদও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত ও অপরাধীদের যথাযথ বিচারের ওপর জোর দেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মতপার্থক্য ভুলে মানবতার স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
Goodwill Ambassador Cate Blanchett speaks to the UN Council.
Cate Blanchett has called on the UN to support the relief effort for Rohingya Muslims. Source: AAP
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রশিল্পী ও জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থার শুভেচ্ছাদূত কেট ব্লানচেট মর্মস্পর্শী প্রদান করেন। তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবিরে তার সাম্প্রতিক সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “আমি একজন মা। উদ্বাস্তু শিশুদের চোখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজের সন্তানদের দেখতে পেয়েছি।”

 

Follow SBS Bangla on .

Share
Published 30 August 2018 5:25pm
By Sikder Taher Ahmad

Share this with family and friends