করোনাভাইরাস: ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ভিক্টোরিয়া-নিউ সাউথ ওয়েলস সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে

মঙ্গলবার রাত ১১:৫৯ মিনিটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ভিক্টোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্ত বন্ধ করা হবে। ভিক্টোরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত।

COVID-19 testing staff arrive at one of the public housing towers on Racecourse Road in Flemington, Melbourne, Sunday, 5 July, 2020.

COVID-19 testing staff arrive at one of the public housing towers on Racecourse Road in Flemington, Melbourne, Sunday, 5 July, 2020. Source: AAP

মেলবোর্নে রেকর্ড-সংখ্যক করোনাভাইরাস কেস দেখা দেওয়ায় গত ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যবর্তী সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে এটি কার্যকর করা হবে।

ভিক্টোরিয়ার প্রিমিয়ার ড্যানিয়েল অ্যান্ড্রুজ সোমবার সকালে এই সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেন। রাজ্যটিতে এক রাতে আরও ১২৭ টি করোনাভাইরাস কেস সনাক্ত হয়েছে। এক দিনে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যার দিক দিয়ে এটি সে রাজ্যের জন্য একটি রেকর্ড।

কোভিড-১৯ এর কারণে সোমবার সকালে ষাটের কোঠার এক ব্যক্তি মারা যান এবং রবিবার রাতে ৯০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ হাসপাতালে মারা যান। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০৬ জনে উপনীত হলো।

মিস্টার অ্যান্ড্রুজ বলেন, সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার গ্লাডিস বেরেজিক্লিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করার মাধ্যমে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে গত ১০০ বছরের মাঝে এই প্রথমবার ভিক্টোরিয়া-নিউ সাউথ ওয়েলস সীমান্ত বন্ধ করা হচ্ছে। ১৯১৯ সালের স্প্যানিশ ফ্লুর বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে সর্বশেষ এই সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছিল।



এই সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে মঙ্গলবার রাত ১১.৫৯ মিনিট থেকে। নিউ সাউথ ওয়েলস সাইডে পুলিশ এটি কার্যকর করবে, বলেন তিনি।

মিস্টার অ্যান্ড্রুজ রিপোর্টারদেরকে বলেন,

“আমরা একমত হয়েছি যে, আমরা সর্বোত্তম যা করতে পারি সেটা হলো সীমান্ত বন্ধ করা। এটি কার্যকর করা হবে নিউ সাউথ ওয়েলস সাইডে। তাই, আমাদের রাজ্য জুড়ে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো পাচার হয়ে যাবে না।”

“এটি সাবধানতামূলক পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি। এই ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তটি আমাদেরকে দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা করবে।”

গত উইকএন্ডে মেলবোর্নে করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব তীব্রতা লাভ করে। গত শনিবারে রাজ্যটিতে ১০৮টি নতুন কেস সনাক্ত করা হয়।

শনিবারের এই ঘটনায় নর্থ মেলবোর্ন এবং কেনসিঙ্গটনের নয়টি পাবলিক হাউজিং ব্লকে কমপক্ষে ৫ দিনের জন্য কঠোরভাবে লকডাউন করা হয়।

সোমবার মিস্টার অ্যান্ড্রুজ বলেন, এই লকডাউন এক পক্ষকালের জন্য চালিয়ে যাওয়া হতে পারে।

তিনি বলেন,

“১৪ দিনের জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, এটি আগেভাগেই বাতিল করা হতে পারে।”
A sign is seen on a window at one of the public housing towers on Racecourse Road in Flemington, Melbourne.
A sign is seen on a window at one of the public housing towers on Racecourse Road in Flemington, Melbourne. Source: AAP
সোমবার রিপোর্ট হওয়া ১২৭ টি নতুন কেসের মধ্যে ১৬ টি কেসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে পাবলিক হাউজিং টাওয়ারগুলোর সঙ্গে। সেই নয়টি বিল্ডিং-এ মোট সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩-তে।

ভিক্টোরিয়াতে এখন প্রায় ৬৫০ টি সক্রিয় কোভিড-১৯ কেস রয়েছে।

সীমান্তবর্তী শহরগুলো, যেমন, অলবুরি-ওডঙ্গা, সীমান্ত বন্ধ করার ফলে এগুলোর অধিবাসীদের যে ‘অসুবিধার’ সৃষ্টি হবে সেজন্য ক্ষমা চেয়েছেন মিস্টার অ্যান্ড্রুজ।

তিনি বলেন, একটি ‘পারমিট সিস্টেম’ এর ব্যবস্থা করা হবে। এ সম্পর্কে সোমবার দিনের শেষে বিস্তারিত জানানো হবে। অপরিহার্য কারণে যাদেরকে সীমান্ত অতিক্রম করতে হবে তাদের জন্য সীমান্তে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভিক্টোরিয়াতে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বৃদ্ধি পাওয়াতে সীমান্ত বন্ধ করাকে ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন মিজ বেরেজিক্লিয়ান।

সিডনিতে রিপোর্টারদেরকে তিনি বলেন,

“ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে যখন আমাদের দেশে উচ্চ সংখ্যায় কেস দেখা গেছে, সেগুলোর একটি বড় সংখ্যা ছিল বিদেশে ভ্রমণকারীরা কিংবা সরাসরি কন্টাক্টগুলো।”

“আর ভিক্টোরিয়াতে যা ঘটছে তা খুবই ভিন্ন রকম। সেজন্যই আমাদেরকে এই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হলো। একান্ত বাধ্য না হলে আমরা এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতাম না।”

মিজ বেরেজিক্লিয়ান বলেন, নিউ সাউথ ওয়েল থেকে যাওয়া লোকদের জন্য অন্যান্য রাজ্যগুলোর সীমান্ত বন্ধ করার কোনো কারণ নেই।

তিনি বলেন,

“ভিক্টোরিয়া বাদে অন্য কোনো রাজ্যের নিউ সাউথ ওয়েলসের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করার আসলেই কোনো কারণ নেই। আর, অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য রাজ্যগুলোর প্রতি আমি অনুরোধ করি, আমাদের জাতীয় স্বার্থে এ নিয়ে চিন্তা করতে।”

টুইটারে এক বিবৃতির মাধ্যমে নিউ সাউথ ওয়েলস-ভিক্টোরিয়া সীমান্ত বন্ধ করার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন কুইন্সল্যান্ডের প্রিমিয়ার অ্যানেস্টেশিয়া প্যালাশে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার মিক ফুলার বলেন, ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স থেকে সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি কার্যকর করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বন্ধ করার পর প্রথম ৭২ ঘণ্টায় সীমান্ত অতিক্রম করা “কঠিন [তবে] অসম্ভব নয়”। সার্ভিস নিউ সাউথ ওয়েলস একজেম্পশনের জন্য মঙ্গলবার একটি অনলাইন এপ্লিকেশনের ব্যবস্থা চালু করবে।

তিনি বলেন,

“বিলম্ব হবে। অপরিহার্য কর্মীদের নিয়ে আমরা কাজ করি।”

“নিউ সাউথ ওয়েলসের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করবো। যারা নিউ সাউথ ওয়েলসে আসবে তাদের জন্য আমরা একটি যৌক্তিক তবে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করবো।”

সোমবার নিউ সাউথ ওয়েলসে কোভিড-১৯ এর ১০টি নতুন কেসের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এগুলোর কোনোটিই কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ঘটে নি।

অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। 

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা এখন ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হয়েছে। আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।

আপনার মোবাইল ফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ফেডারাল সরকারের করোনাভাইরাস ট্রেসিং অ্যাপ COVIDSafe ডাউনলোড করা যাবে।

আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।

অস্ট্রেলিয়ার বৈচিত্রময় সম্প্রদায়গুলোকে কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ অবস্থা জানাতে এসবিএস দৃঢ়প্রতীজ্ঞ। ৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পেতে ভিজিট করুন: .

বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন:

Follow SBS Bangla on .



 


Share
Published 6 July 2020 6:16pm
Updated 12 August 2022 3:14pm
By Evan Young, Maani Truu
Presented by Sikder Taher Ahmad


Share this with family and friends