"নতুনদের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি পেতে প্রয়োজন একটি সঠিক পরিকল্পনা"

Bangladeshi migrant, Hidden job market, Unemployment

অস্ট্রেলিয়ায় চাকরি পেতে ভালো করে রিসার্চ করা প্রয়োজন Source: Supplied

চাকরি খোঁজা সহজ কাজ নয়, আর তা যদি হয় নতুন কোন দেশে তবে সেটা আরো কঠিন। অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আসা বাংলাদেশিরাও তার ব্যতিক্রম নন। অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আগতরা চাকরি পেতে যেসব সঙ্কটে পড়েন এবং তা থেকে কিভাবে উত্তরণ সম্ভব - এ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্যারিয়ার পার্টনার অস্ট্রেলিয়ার ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট মাহবুব সিরাজ।


অস্ট্রেলিয়ায় এসে নতুন চাকরি প্রার্থীরা যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন সে সম্পর্কে মি: মাহবুব সিরাজ বলেন, অনেকেই যেসব পেশায় অভিবাসনের জন্য স্থায়ী ভিসা নিয়ে আসেন, তারা প্রথমেই সাধারণতঃ সেসব পেশায় কাজ পান না, এতে তারা হতাশ হন। 

অনেকেই জানেন না অস্ট্রেলিয়ার কাজ খোঁজার সিস্টেমটি কিভাবে কাজ করে, এখানে চাকরির আবেদন, রেফারেন্সিং এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য যে সব বিষয় আছে তা বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। 

"আমরা বাংলাদেশে যেভাবে জব খুঁজে এসেছি, অস্ট্রেলিয়ার কনটেক্সটটি টোটালি ডিফারেন্ট। এ জিনিসটি বুঝতেই আমাদের সময় লেগে যায়, কারো ছয় মাস, কারো এক বছর।"

চাকরি খুঁজতে সঠিক পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে পরামর্শ দেন তিনি।
Bangladeshi migrant, Hidden job market, Unemployment
চাকরি পাবার ক্ষেত্রে 'কোল্ড কলিং' খুবই ইম্পরট্যান্ট এবং ভাইটাল এপ্রোচ Source: Supplied
"আমরা যদি প্রথমেই গবেষণা করি, অস্ট্রেলিয়ান জব মার্কেটের প্যাটার্নটা কি তাহলে এই দ্বিধা থেকে উত্তরণ সম্ভব।"

"অনেকেই হাজার হাজার এপ্লিকেশন করছেন কিন্তু জব হচ্ছে না, তাছাড়া তাদের অভিজ্ঞতাকে সেই প্রফেশনের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না। অনেকেই বুঝতে পারেন না তাদের রেসুমে বা সি-ভি (আবেদনের জন্য জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বিবরণী) ঠিক ভাবে লেখা হয়েছে কিনা।"  

তিনি বলেন,  অস্ট্রেলিয়ায় চাকরির জন্য রেফারেন্স বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে অনেকেই সঠিক ভাবে রেফারেন্স দিতে না পারায় চাকরি হচ্ছে না। এ জন্য এমনকি মোটামুটি চলার জন্য অদক্ষ শ্রমের কাজ পেতেও সমস্যা হয়।

এই চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবেলা সম্ভব- মিঃ সিরাজ বলেন,  "এ জন্য প্রার্থীদের ফ্রি ক্যারিয়ার কন্সালটেন্সি সেশন আয়োজন করি। প্রথমে তাদের সি-ভি দেখে তাদের ক্যারিয়ার পাথওয়ে কি হতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দেই।"

তিনি জানান, এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রার্থীদের সাথে এককভাবে সাক্ষাৎ করে তাদের সি-ভিটি ভালোভাবে নিরীক্ষা করে নিতে হয়, কারণ খুব কম সি-ভি আমি দেখেছি যেগুলো পারফেক্ট হয়, অস্ট্রেলিয়ান এমপ্লয়াররা প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য সাধারণতঃ ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড সময় নেন আবেদনটি বিবেচনা করা হবে কিনা। কোন কোন প্রতিষ্ঠান এতো এডভান্স যে তারা এ জন্য সফটওয়ের ব্যবহার করে মূল শব্দগুলো খুঁজে আবেদনপত্র বাছাই করে।

"তো এই বিষয় বিবেচনা করে প্রার্থীদের স্ট্যান্ডার্ড রেসুমে (আবেদনের জন্য জীবন বৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বিবরণী), কভার লেটার, নেটওয়ার্কিং, রেফারেন্স এবং নিজে নিজে বিকল্প খোঁজার বিষয়ে পরামর্শ দেই।"

নতুন আগতরা রেফারেন্স কিভাবে পাবে - এর উত্তরে তিনি বলেন, রেফারেন্স নিজে থেকেই তৈরী করা যায়, কমিউনিটিতে যারা ভালো অবস্থানে আছেন তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে, নিজ নিজ প্রফেশনাল অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে প্রয়োজনে ভলান্টারী কাজ করে এটা করতে হয়।

চাকরি পেতে পেশাগত অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান অভিজ্ঞতা। এ  বিষয়ে তিনি আবারো ভলান্টারি কাজের অভিজ্ঞতা যা পেশাগত অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো সম্ভব এবং নেটওয়ার্কিং-এর ওপর জোর দিতে পরামর্শ দেন।

ভালো ইংরেজি জানা চাকরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে যেহেতু অস্ট্রেলিয়া অভিবাসীদের দেশ তাই এবং তাদের বেশিরভাগই নন-ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নেয়া যায় এমন ইংরেজি জানা থাকা প্রয়োজন। অস্ট্রেলিয়ানদের উচ্চারণ বুঝতে পারাটা কঠিন তবে অসম্ভব নয় বলে মনে করেন মিঃ সিরাজ। কিছু কিছু পেশা যেমন কাস্টমার সার্ভিস, সেলস কিংবা নিয়োগদাতারা প্রয়োজন অনুযায়ী ভালো ইংরেজি জানা থাকতে হবে। 

অনেকেই ভেবে থাকেন তারা যে পেশায় স্থায়ী ভাবে থাকার ভিসা পেয়েছেন তারা সেই পেশাতেই কাজ করবেন, এটা ধারণার মধ্যে কিছুটা ঘাটতি আছে, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সে ব্যাপারটা ঘটে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তার ভিন্ন বা সমমানের পেশার বিষয়েও ভাবা প্রয়োজন। তবে তথ্য প্রযুক্তি, হেলথ কেয়ার, ডিসেবিলিটি, এজেড কেয়ার, মাইনিং, ফার্মিং ইত্যাদি পেশায় কাজ পাওয়া সহজ। 

ক্যারিয়ার কনসালটেন্ট হিসেবে তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, স্কিল ভিসা নিয়ে আসা অভিবাসীদের চেয়ে এখানে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করেছেন তাদেরকে নিয়োগদাতারা বেশি গুরুত্ব দেন, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই শিক্ষার্থীরা প্রফেশনাল ইয়ার সম্পন্ন করে যা কাজের অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

চাকরি পাবার ক্ষেত্রে 'কোল্ড কলিং' (নিজে থেকে নিয়োগদাতা বা সম্ভাব্য এজেন্টের কাছে কর্মসংস্থানের খোঁজ নেয়া)  কতটা কাজে দেয় - এই প্রশ্নের জবাবে মিঃ সিরাজ বলেন, "কাজ পাবার জন্য এটা খুবই ইম্পরট্যান্ট এবং ভাইটাল এপ্রোচ। 'কোল্ড কলিং' সাধারণত হিডেন জব মার্কেটের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগদাতা বিজ্ঞাপন দেন না, তারা নিজেদের পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে লোক খোঁজেন এবং নিয়োগ দেন। কেউ যদি নিজে থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ধরণের চাকরি খোঁজেন, হয়তো পেয়েও যেতে পারেন। এমন ভাবে কাজ পাবার অনেক দৃষ্টান্ত আছে।"

অস্ট্রেলিয়ায় নতুন আগতদের চাকরি পেতে ভালো করে রিসার্চ করার পরামর্শ দিয়ে মিঃ মাহবুব সিরাজ বলেন, "এক্ষেত্রে আপনাদের প্রো-একটিভ হওয়া জরুরি; প্রফেশনাল, পার্সোনাল, সব ধরণের নেটওয়ার্ক খতিয়ে দেখুন। কর্মসংস্থানহীন থাকার চেয়ে প্রয়োজনে 'আউট অফ বক্স' চিন্তা করতে হবে, অন্য পেশাতেও সুইচ করার মানসিকতা থাকতে হবে।" 

পুরো সাক্ষাৎকারটি শুনতে ওপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন 

Follow us on



Share