অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের হার করোনা-পূর্ব পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া না হলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ঝুঁকিগ্রস্ত হবে

Economic recovery at risk if pre-pandemic migration levels not restored

Economic recovery at risk if pre-pandemic migration levels not restored. Source: Moment RF

যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যত দ্রুত সম্ভব অভিবাসীদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর আগে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী গ্রহণের যে হার ছিল, সেটা যদি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হয়, তাহলে আর্থিক খাতে এর অনেক প্রভাব পড়বে।


একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে অভিবাসন হ্রাস পাওয়ায় আগামী দশক জুড়ে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যায় ১.১ মিলিয়ন লোক কম হবে।

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর প্রাদূর্ভাবের ২০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ৫৭ শতাংশ পূরণ করতো বিদেশ থেকে আসা অভিবাসীরা। সেই একই সময়কালে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও অভিবাসীরা ২০ শতাংশ অবদান রাখতেন।

কিন্তু, অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম দেশটির নেট মাইগ্রেশন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। আর, অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন যে, কোভিড-পূর্ব অবস্থায় অভিবাসনের যে হার ছিল, সেটা যদি ফিরিয়ে আনা না হয়, তাহলে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আরবান টাস্কফোর্সের চিফ একজিকিউটিভ টম ফরেস্ট বলেন, তিনটি বিষয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে পরিচালিত করে। এগুলো হলো, অংশগ্রহণ, উৎপাদন এবং জনসংখ্যা।

এই অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নিয়োজিত হয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করেছে বি-আই-এস অক্সফোর্ড। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে অভিবাসন হ্রাস পেলে আগামী দশক জুড়ে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা থেকে ১.১ মিলিয়ন কমে যাবে।

এর ফলে কর্মী-বাহিনী ছোট হয়ে যাবে এবং ২০২৪ সাল নাগাদ এর আকার হবে ৮২২,০০০ জন। এর ফলে প্রবৃদ্ধি ধীরগতি হয়ে যাবে এবং অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির আকার প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে।
রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, দক্ষ স্থায়ী অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের হার ৯২ শতাংশ। এর বিপরীতে, অস্ট্রেলিয়ায় কাজের-বয়সী জনসংখ্যার এক্ষেত্রে সামগ্রিক হার হলো ৬৬ শতাংশ। এর মানে হলো, দক্ষ অভিবাসীরা যা গ্রহণ করে তার বিপরীতে তারা বেশি রাজস্ব ও কর প্রদান করে।

মিস্টার ফরেস্ট বলেন, অতিমারী বিষয়ক সরকারি ঋণ পরিশোধের জন্য এবং অন্যান্য সেবাগুলোর অর্থায়নের জন্য তার বিশেষ দরকার আছে।

শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সেটেলমেন্ট এজেন্সি AMES (এইমস) এর চিফ একজিকিউটিভ ক্যাথ স্ক্যার্থ বলেন, অস্ট্রেলিয়ানরা সাধারণত যে-সব কাজ করতে চান না কিংবা করতে পারেন না সেসব কাজ করে থাকেন অভিবাসীরা।

অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

স্টেট ও টেরিটোরি সরকারগুলো বছর শেষ হওয়ার আগেই কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ২০১৮-১৯ অর্থ-বছরে তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় স্থানীয়ভাবে ২৪০,০০০ এরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে।

তবে ফেডারাল ইমিগ্রেশন মিনিস্টার অ্যালেক্স হাক এসবিএস পাঞ্জাবিকে বলেন, তাদের পড়াশোনা কিছু সময়ের জন্য অনলাইনে চলবে।

অভিবাসন কমে যাওয়ার ধাক্কা নিউ সাউথ ওয়েলসে অনুভূত হয়েছে। বিশেষত, কমসেক এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্রেইগ জেমস যেভাবে বলেন, এই রাজ্যটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখন দুর্বল এবং গত সাড়ে পঁচিশ বছরে এর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে ধীর।

ক্যাথ স্ক্যার্থ বলেন, অভিবাসীদেরকে অভিবাসনে, কর্মসংস্থানে এবং এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও অনেক সহায়তা করে থাকে AMES।

তবে, তারা হয়তো আরও কঠিন প্রপার্টি মার্কেটের সময়ে ফিরে আসবে।

টম ফরেস্ট বলেন, গ্রেটার সিডনি এলাকার স্থানীয় কাউন্সিলগুলো কোভিড-১৯ এর সময়টিতে এই অভিবাসন হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছে। তারা আবাসন পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়েছে।

তিনি আহ্বান জানান যে, পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়ে এসব লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হোক। কারণ, ইতোমধ্যে শহরগুলোতে ঘর-বাড়ির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেকের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

ক্যাথ স্ক্যার্থ বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলো বন্ধ করায় যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, তার মানে হলো, অভিবাসীদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিবে।

টম ফরেস্ট বলেন, তারা যেন অন্য কোথাও চলে না যান, সেজন্য বহু কিছু করার আছে।

ফেডারাল সরকারের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ঘোষিত হবে ১১ মে এর বাজেটে।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .



Share