কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে নমনীয় কাজের ব্যবস্থা

Young mother on the phone with a small child

Young mother on the phone with a small child Source: Getty Images/Jose Luis Pelaez Inc

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর কারণে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের ধরন পরিবর্তন করেছে।এতদিন ধরে মানষ যেভাবে কাজ করে এসেছে, এখন সেটার পুনর্মূল্যায়ন, পুনর্বিন্যাস এবং নতুন উপায় বের করতে বাধ্য হয়েছে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো।


হাইলাইটস

  • রিমোট-অফিস কাজ করার বিষয়টিকে সাধারণ বিষয় করে দিয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারী।
  • কোভিড-১৯ দীর্ঘ সময় ধরে চলায় এর ভিন্ন রকম প্রভাব পড়েছে।
  • কর্মীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য যা যা করণীয় সেসব করা উচিত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের।

নমনীয় কাজের ব্যবস্থা (ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টের) ক্ষেত্রে নিয়োগদাতারা আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে কর্মীদের কাজকর্ম ও ভাল-মন্দ তত্ত্বাবধানে। ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি বিজনেস স্কুলের সর্বশেষ গবেষণা অনুসারে, কোভিড-১৯ এর পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মীরা ঘরে থেকে কাজ করতে চান।

এই জরিপের কো-অথর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ম্যাথিউ বেক বলেন, ব্যবসা-ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর প্রভাব এর আগের অন্যান্য বিপদ-আপদের তুলনায় ভিন্ন রকম।কোভিড-১৯ দীর্ঘ সময় ধরে চলায় এর ভিন্ন রকম প্রভাব পড়েছে।


সমীক্ষাটিতে দেখা গেছে, এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে দূরে থেকে (রিমোট-অফিস ) দ্বিগুণ সংখ্যক দিন কাজ করেছেন ম্যানেজাররা।আর, দূরে থেকে তিন গুণ সংখ্যক দিন কাজ করেছেন সে-সব কর্মীরা, যারা ক্লারিকাল জব করেন।মানুষ যখন কর্মক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করেছে, তখন অনেক সময় এবং অর্থের সাশ্রয় হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ৩৩ টি স্থানে প্রায় দুই শ’ লোক নিয়োগ দিয়েছে ওয়ারেলস সলভেন্সি অ্যান্ড ফরেনসিক অ্যাকাউন্টেন্টস।ওয়ারেলস মেলবোর্নের পার্টনার ইভান গ্লেভাস বলেন, মেলবোর্নের ১৬ সপ্তাহের লকডাউনের শুরুর দিকে, তিনি ভেবেছিলেন উৎপাদন কমে যাবে।কিন্তু, ঘটেছে এর ঠিক বিপরীত।উৎপাদন আসলে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইভান গ্লেভাস বলেন, দূরে থেকে কাজ করার বিষয়টিকে সাধারণ বিষয় করে দিয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারী।আর, তার কর্মীরা ভবিষ্যতের জন্য একটি হাইব্রিড রিমোট-অফিস মডেল চাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহৎ একটি ডিজিটাল ইভেন্ট ও কনফারেন্স আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান হলো রেডব্যাক কানেক্ট।তারা একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেতে পেয়েছে যে, এতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ ব্যক্তি পাকাপাকি ভাবে ঘরে থেকে কাজ করার ব্যবস্থা চালু রাখতে চায়।


রিমোট-অফিস কাজ করার বিষয়টিকে সাধারণ বিষয় করে দিয়েছে এই বৈশ্বিক মহামারী।

রেড ব্যাক কানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেফ ডৌনস বলেন, সমীক্ষাটির কোনো কোনো ফলাফল তাকে বিস্মিত করেছে।যেমন, কর্মীরা পুরো সপ্তাহই ঘরে থেকে কাজ করতে চায় না।তারা কিছু দিন ঘরে এবং কিছু দিন কর্মক্ষেত্রে গিয়ে কাজ করতে চায়, যেন সহকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকে।

জেফডৌনস দেখতে পান যে, কর্মীদের প্রতি ভরসা রাখা হলে যে, তারা নিজেদের কাজ সামলে নিতে পারবেন, তাহলে তারা খুশি ও সন্তুষ্ট হয়।

কোভিড-১৯ এর ফলে দূর থেকে কাজ করার বিষয়ে আস্থা রাখার সংস্কৃতি গড়ে তোলা বহু ব্যবসার জন্য দরকারি হয়ে পড়েছে।

আউটকামস বিজনেস গ্রুপ-এর বিজনেস কোচ সিন্ডি ড্রেক বলেন, এটা ব্যবসা-মালিকদের বিষয় যে, তারা কীভাবে তাদের টিমকে খাপ খাওয়াবেন সেটা নির্ধারণ করা।

তবে, যারা কাজ থেকে বিরতি নিতে চান না এবং সবসময় বেশি বেশি কাজ করে থাকেন, তাদের জন্য ঘরে থেকে কাজ করাটা দো’ধারি তলোয়ারের মতো।

নিউসাউথ ওয়েলস সরকারের বিজনেস কানেক্ট প্রোগ্রামে ইরানী ভাষা-ভাষী বিজনেস অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন নাজনিন মাজিদি।তিনি বলেন, ঘরে থেকে কাজ করলে তিনি বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।

ওয়ারেলস মেলবোর্ন এর পার্টনার ইভান গ্লেভাস বলেন, রিমোট ওয়ার্কিংয়ের যেমন উপকার আছে, তেমনি কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে অস্পষ্টতার কারণে এর গোপন কিছু চ্যালেঞ্জ আছে।তিনি মনে করেন, কর্মীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য যা যা করণীয় সেসব করা উচিত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের।

কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল হওয়ায় বহু কোম্পানি তাদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলগুলো পুনরায় চালু করার কথা ভাবছে।
রেড ব্যাক কানেক্টস-এর জেফ ডৌনস বলেন, কর্মীরা যেন অহেতুক মানসিক চাপগুলো দূর করতে পারেন সেজন্য যথাযথ চুক্তি করতে হবে।

নানা কারণেই মানুষ ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক বা নমনীয় শর্তে কাজ করতে চায়।তবে, এটাও মনে রাখতে হবে যে, সব কাজ রিমোটলি বা দূরে থেকে সম্পাদন করা যায় না।কাজের ধরন অনুযায়ী ফ্লেক্সিবল ওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টের সাফল্য নির্ভর করে।

ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কের ক্ষেত্রে আপনি কীভাবে কাজের লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ করবেন সে-বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকলে নিয়োগ দাতারা আপনার কাজের উপরে ভরসা করতে পারবেন।

কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে, কীভাবে ফ্লেক্সিবল আওয়ার্স এর জন্য দেন-দরবার করবেন কিংবা আপনি যদি আপনার কাজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না থাকেন, তাহলে ফেয়ার ওয়ার্ক অমবাডজম্যান ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার পরামর্শ দেন বিজনেস কোচ সিন্ডি ড্রেক।

ভাষাগতসুবিধার জন্য ন্যাশনাল ট্রানস্লেটিং অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটিং সার্ভিসে কল করুন 13 14 50 নম্বরে।


Share