সেটেলমেন্ট গাইড: অস্ট্রেলিয়ার অ্যানজ্যাকদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র

Anzac Day

Source: Getty image

প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় অ্যানজ্যাক ডে পালিত হয়। যারা বিভিন্ন যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন তাদেরকে আমরা স্মরণ করি সেদিন। অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পরিচিতির ক্ষেত্রে অ্যানজ্যাক ডে একটি প্রতীক হিসেবে পালিত হচ্ছে।অস্ট্রেলিয়া এবং নিউ জিল্যান্ডের সেনাবাহিনী, যার মাঝে বহু আদিবাসী এবং বহু-সাংস্কৃতিক সৈন্য রয়েছেন তারা সবাই অ্যানজ্যাক হিসেবে পরিচিত।প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারের লিংকটিতে ক্লিক করুন।


১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই যুদ্ধে ব্রিটেনের পক্ষ নিয়ে কেন্দ্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অস্ট্রেলিয়া। জার্মেনি, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং ‍উসমানীয় সাম্রাজ্য ছিল কেন্দ্রীয় শক্তির অন্তর্ভুক্ত।৪২০ হাজার তালিকাভুক্ত সৈন্যের মাঝে এক হাজারেরও বেশি ছিল অ্যাবোরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার। তারা স্বেচ্ছা-প্রণোদিত হয়ে এতে যোগ দেয়।

বৈচিত্রময় ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা আরও বহু সৈন্যও এতে যোগ দেয়।মেলবোর্নের চায়নিজ মিউজিয়ামে স্বেচ্ছাসেবী গবেষক হিসেবে কাজ করেন প্রফেসর এডমন্ড চিউ।তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ১৯০৩ সালের একটি আইন থাকা সত্ত্বেও বালারতের আলবার্ট ভিক্টর চান-ই ছিল প্রথম চায়নিজ-অস্ট্রেলিয়ান যিনি যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

চায়নিজ-অস্ট্রেলিয়ান অ্যানজ্যাকদের নিয়ে তার গবেষণায় এ পর্যন্ত ২১৭ ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, মেডিকেল অফিসারদের বদান্যতার কারণেই এই দেশ-প্রেমীকরা তাদের দেশের সেবা করার সুযোগ লাভ করেছিলেন।

জনগণের মধ্যকার কেউ কেউ জাতিগত পরিচয় নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাতেন না।জর্জ কং মেং ইতোপূর্বে সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন এবং তার ছোট ভাইও পশ্চিম রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছে। তা সত্ত্বেও যখন অস্ট্রেলিয়ান ইমপেরিয়াল ফোর্সে জর্জ কং মেং-কে প্রত্যাখ্যান করা হয় তখন জনগণ ফুঁসে উঠে।

অ্যাবোরিজিনাল অ্যান্ড টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ভেটেরান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট, Gundungurra man গ্যারি ওকলে বলেন, স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার জন্য বহু আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান দৃঢ়-প্রতীজ্ঞ ছিলেন।
যাদের গায়ের রঙ ঘন কৃষ্ণ বর্ণ তারা নিষেধাজ্ঞাকে নানাভাবে পাশ কাটাতেন।


গ্যারি ওকলে বলেন, অ্যাবোরিজিনাল ও টরেস স্ট্রেইট আইল্যান্ডার ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষেরা যোগ দিয়েছিলেন ভিন্ন ভিন্ন কারণে। জীবনে প্রথমবারের মতো অর্থ উপার্জন করাও এর অন্যতম কারণ ছিল।
গ্যারি ওকলে মনে করেন, এই প্রথমবার আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা সাম্য দেখতে পেলেন।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক, ড. এলেনা গোভার মনে করেন, ইওরোপীয় ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া হাজার হাজার সৈন্য লড়াই করেছেন শুধুমাত্র গ্রহণযোগ্যতা লাভের আশায়।

অস্ট্রেলিয়ান ইমপেরিয়াল ফোর্সে ব্রিটিশ, নিউ জিল্যান্ড এবং কানাডায় জন্ম নেওয়া সদস্যদের পর রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া অ্যানজ্যাকরাই সবচেয়ে বেশি ছিলেন।রাশিয়ান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে, বিভিন্ন জাতি থেকে তারা এসেছিলেন।রাশিয়ায় জন্ম নেওয়া এসব সার্ভিসম্যানের অর্ধেকেরও বেশি বাল্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন।

হতাহতের সংখ্যার দিক দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।এতে ৬০ হাজারেরও বেশি মারা গেছে এবং আরও ১৫৬ হাজার সার্ভিসম্যান হয় আহত বা নিহত হয়েছিল নতুবা বন্দি হয়েছিল।দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বেঁচে যাওয়া বহু লোকের ভাগ্য পরবর্তীতে আর পরিবর্তিত হয় নি।

আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যদের সামাজিক মর্যাদা উন্নীত করার আশা ১৯৪৯ সালের আগ পর্যন্ত পূরণ হয় নি। ১৯৪৯ সালে সেনাবাহিনীতে জাতিগত ভিত্তিতে নিয়োগদানের প্রথার বিলুপ্তি ঘটে।


প্রফেসর এডমন্ড চিউ বলেন, সোলজার সেটেলমেন্ট স্কিমে ভূমি লাভ করা সত্ত্বেও চায়নিজ-অস্ট্রেলিয়ান ওয়ার হিরো বা যুদ্ধ-নায়ক বিলি সিং-এর শেষ পরিণতি বড় দুঃখজনক হয়।

ড. গোভার ব্যাখ্যা করে বলেন যে, কতিপয় রাশিয়ান অ্যানজ্যাক যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন নি।
সার্ভিস প্রদান শেষ করার পর রাশিয়ান অ্যানজ্যাকরা কীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় সেটল করলেন সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ড. গোভার।

স্থানীয় নারীদের সঙ্গে বিয়ের মাধ্যমে এবং তাদের সহায়তা নিয়ে রাশিয়ান অ্যানজ্যাকরা অস্ট্রেলিয়ানে পরিণত হন।

ড. গোভার বলেন, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এবং জাতিগত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা অ্যানজ্যাকদের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার মাল্টি-কালচারিজম বা বহু-সংস্কৃতি শুরু হয়।

ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের কাছে অ্যানজ্যাক ডে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। তবে, গ্যারি ওকলে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে ২৫ এপ্রিল হলো স্বীকৃতি লাভের দিন।

অস্ট্রেলিয়ার অ্যানজ্যাক ডে-এর ট্রাডিশন সম্পর্কে আরও জানতে অস্ট্রেলিয়ান ওয়ার মেমোরিয়ালের ওয়েবসাইট দেখুন, ভিজিট করুন https://www.awm.gov.au :


Share