শিক্ষার্থীদের সেফ প্যাসেজ: মোদী-পুতিন কথা

ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। পড়ুয়ারা যুদ্ধের সময় ইউক্রেনে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তাকে।

 Indian Government has launched an evacuation program 'Operation Ganga' to bring back all the Indian students and citizens who are stranded in Ukraine and at adjoining border areas amid crisis in Ukraine, already thousands of Indian students pursuing medi

Indian students evacuated from Ukraine are received by their relatives amid the crisis, at Indira Gandhi International airport in New Delhi India, 03 March 2022 Source: AAP Image/EPA/RAJAT GUPTA

ভারতের বারাণসী ছাড়াও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়ুয়ারা ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাদের বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে। এদিকে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, ভারতীয়দের উদ্ধারে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্যদিকে, ইউক্রেনের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এশিয়া, আফ্রিকা-সহ বিভিন্ন দেশের পড়ুয়াদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনতে ১৯ টি বিমান চালাবে বায়ুসেনা এবং বিমান সংস্থাগুলি, জানিয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। বৃহস্পতিবার থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু করেছে বিমানগুলি। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ রোমানিয়া, হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন ৩ হাজার ৭২৬ জন ভারতীয়। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য বায়ুসেনা, এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর বিমান চালানো হচ্ছে অপারেশন গঙ্গা-র অধীনে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া জানিয়েছেন, প্রথমে ৮ টি বিমান যাবে বুখারেস্টে। উদ্ধারকাজে এয়ার ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিগোর পাশাপাশি থাকবে বায়ুসেনার সি-১৭ সেনাবিমান। রোমানিয়ার শহর সশেভ থেকে ইন্ডিয়োগর দু’টি বিমান এবং স্লোভাকিয়ার শহর কোসিস থেকে স্পাইসজেটের একটি বিমান ভারতীয়দের নিয়ে বৃহস্পতিবারই দেশের উদ্দেশে রওনা দেবে।

অন্যদিকে, বায়ুসেনা, গো ফার্স্ট এবং এয়ার ইন্ডিয়া হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে পাঁচটি বিমান চালাবে। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া টুইট করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে ৩ হাজার ৭২৬ ভারতীয়কে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।
ছ’দিন ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি বাঙ্কারে আটকে থাকার পর সুযোগ পেতেই হেঁটে পশ্চিমের পড়শি দেশ পোল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছে ছেলে, তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর খানিক স্বস্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির বিশ্বাস পরিবার। তবু ছেলে ঘরে না-ফেরা পর্যন্ত কাটছে না দুশ্চিন্তা। কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেছেন মা রেখা বিশ্বাস। ইউক্রেনের খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন আশিস বিশ্বাস। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। ডাক্তারির কোর্স শেষ হতে আর কিছু দিন বাকি ছিল। তার মধ্যেই ইউক্রেনে হামলা। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে যুদ্ধ-পরিস্থিতির আবহে বোমা থেকে বাঁচতেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের (কোল্ড ওয়ার) সময় তৈরি হওয়ায় বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন আশিস বিশ্বাস।

আসলে চিকিৎসক হতে চাওয়া ভারতীয়দের কাছে আরও এক পরিচয় রয়েছে পূর্ব ইউরোপের ইউক্রেনের। এই যুদ্ধ জানিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছেন ইউক্রেনে। যাঁদের বেশির ভাগই গিয়েছেন ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করতে। যা হিসেব পাওয়া গিয়েছে শুধু বাঙালি পড়ুয়ার সংখ্যাও সাড়ে তিনশোর আশপাশে। কিন্তু কেন এত পড়ুয়া দলে দলে ইউক্রেনে যান ডাক্তারি পড়তে? বলা হচ্ছে যে, কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পায় না যারা, তাঁরাই কম খরচে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে কোর্সের দিকে ঝোঁকেন।
বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে কোর্সের খরচ আর ক্যাপিটেশন ফি মিলিয়ে খরচ প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। তাই অভিভাবকরা অনেকটা কম খরচে ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেন। পাঁচ বছর আট মাসের কোর্সের জন্য ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজে খরচ ২৬ লাখ টাকার মতো। আর ইউক্রেন থেকে পাশ করলে ইউরোপের অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষা থেকে চাকরি সবেরই সুযোগ বেশি। রাশিয়া, জার্মানি-সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আরও পড়াশোনা করা কিংবা প্র্যাকটিস করার সুবিধা রয়েছে। ইউক্রেনের মেডিক্যাল কলেজগুলি খুবই ভাল এবং সেগুলির ডিগ্রির গুরুত্বও রয়েছে।

তবে ভারতে ইউক্রেনের ডিগ্রি নিয়ে চিকিৎসা করা যায় না। তার জন্য ভারতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিলের নেওয়া ফরেন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েট একজাম বা, এফএমজিই,পাশ করতে হয়। তবে অনেকেই তা পারেন না। ওই পরীক্ষায় পাশের হার খুবই কম।

এদিকে, ইউক্রেনের কথা বেশি করে জানা গেলেও তুলনায় অনেক বেশি পড়ুয়া ভারত থেকে চীন এবং ফিলিপিন্সে ডাক্তারি পড়তে যান।প্রতি বছর দেশে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা এনইইটি পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু পাশ করেও র‌্যাঙ্ক ভাল না থাকায় দেশে সুযোগ পান না। অন্য দিকে, প্রবেশিকা ছাড়াই ভর্তি হওয়া যায় ইউক্রেনে। আর তাতেই ভারতীয় পড়ুয়াদের কাছে আরও অনেক দেশের পড়ুয়াদের মতো ইউক্রেন হয়ে উঠেছে ডাক্তারি পড়ার অন্যতম ডেস্টিনেশন।
এর মধ্যে অন্য বিষয়ও উঠছে। এই যেমন, ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের উদ্ধারের বিষয়ে কী করবে সুপ্রিম কোর্ট। এমনই মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলবেন। ইউক্রেনে আটকে থাকা পড়ুয়াদের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। কিন্তু এখানে আদালত কী করবে। কেন্দ্র তাদের ফিরিয়ে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে, পিটিশন দায়েরকারীর আইনজীবী জানিয়েছেন, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরি থেকে উদ্ধারকারী বিমান চলাচল করছে। রোমানিয়া থেকে বিমান চালানো হচ্ছে না। অথচ রোমানিয়া সীমান্তে বহু ভারতীয় পড়ুয়া আটকে রয়েছেন। তাদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। সেখানে কোনওরকম সুযোগ-সুবিধা নেই। এই তথ্য জানার পরই শীর্ষ আদালত আটক পড়ুয়াদের দ্রুত সাহায্য়ের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকে।
আর ইউক্রেন ইস্যুতে কেন্দ্রের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে দেশের বিরোধী দল কংগ্রেস। সমস্ত দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ২১ জন সদস্যকে নিয়ে কনসাল্টিং কমিটি তৈরি করেছে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটিকেই ইউক্রেনে থাকা পড়ুয়াদের পরিস্থিতি, তাদের ফেরানোর ব্যবস্থা নিয়ে অবগত করা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, আনন্দ শর্মা ও শশী থারুর, শিবসেনা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। পরে এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, সর্বসম্মতভাবে সমর্থনের বার্তা উঠে এসেছে এই বৈঠকে। বৈঠক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। এই ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফেরাতে সবরকমভাবে চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

তারপরও সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীই নন, পড়ুয়াদের উদ্ধারে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শশী থারুরও। তবে বৈঠকের পর শশী থারুর টুইটে লিখেছেন, খুব ভালো বৈঠক। সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন শশী থারুর।


Follow SBS Bangla on .

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Published 4 March 2022 8:46pm
By Partha Mukhopadhyay

Share this with family and friends