ফেডারেল বাজেট ২০২১: যারা লাভবান হলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন

These are the winners and losers from the 2021 federal budget.

These are the winners and losers from the 2021 federal budget. Source: SBS News

এবারের বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই বাজেট কল্যাণমুখী ও প্রগতিশীল বলা হলেও অনেকেই কিছু কিছু সেক্টরে সরকারের বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। দেখা যাক এবারের বাজেটে কারা লাভবান হলেন এবং কারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।


বাজেটের লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ করেছেন এডিথ কাউয়ান ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ বিজনেস এন্ড ল' ডিপার্টমেন্ট অফ ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টিং-এর লেকচারার ডঃ তন্ময় চৌধুরী


গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো 

  • এবারের বাজেটে নারীদের কল্যাণে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হলেও নতুন অভিবাসীদের ওয়েলফেয়ার পেমেন্ট পেতে অপেক্ষা করতে হবে চার বছর। 
  • সরকার আগামী চার বছর মানসিক স্বাস্থ্য খাতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছে।
  • ২০২১-২২ অর্থবছরে মাইগ্রেশন ক্যাপ আগের মতই আছে অর্থাৎ বছরে ১৬০,০০০, মধ্য ২০২২-এর আগে হয়তো টেম্পোরারি এবং পার্মানেন্ট মাইগ্রেশন শুরু হবে না।  

এই বাজেটে যে খাতগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে 

এবারের বাজেটে বেশ কিছু স্বাস্থ্য এবং সামাজিক কল্যাণ খাতে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা 

সরকার আগামী চার বছর মানসিক স্বাস্থ্য খাতে ২.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে আছে ১.৪ বিলিয়ন ডলার মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা, ২৯৮.১ মিলিয়ন ডলার আত্মহত্যা প্রতিরোধ, এবং ২৪৮.৬ মিলিয়ন ডলার আর্লি ইন্টারভেনশন কর্মসূচিতে।
The government has pledged $2.3 billion over the next four years to better the mental health of Australians.
The government has pledged $2.3 billion over the next four years to better the mental health of Australians. Source: Getty
পারিবারিক এবং যৌন সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত 

সরকার আগামী চার বছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে যেসব নারী ও শিশুরা পারিবারিক এবং যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে আছে সহিংস সম্পর্ক থেকে পালিয়ে যাওয়া নারীদের জন্য দুবছরের একটি ট্রায়াল যেখানে তাদেরকে পাঁচ হাজার ডলার করে দেয়া হবে।  

এর মধ্যে রেফিউজি এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য তিন বছরে বরাদ্দ ৩০ মিলিয়ন ডলার, এবং ফার্স্ট নেশন নারী ও শিশুদের জন্য আগামী চার বছর ব্যয় করা হবে ২৬ মিলিয়ন ডলার। 

এডিথ কাউয়ান ইউনিভার্সিটির ফাইন্যান্স এন্ড একাউন্টিং-এর লেকচারার ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, এবারের বাজেটে নারী কল্যাণের জন্য বড়ো রকমের বরাদ্দ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এবং নারীদের পড়াশোনা ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য অধিকার কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলো, তারই প্রতিফলন এই বরাদ্দ।
বয়স্ক সেবা খাত 

গত মার্চের ৪৫২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পর নতুন করে ১৭.৭ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।  এর ফলে বয়স্ক সেবা খাতকে আরো কার্যকর করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  উল্লেখ্য সাম্প্রতিক সময়ে রয়েল কমিশন রিপোর্টে এজড কেয়ার সেক্টর সম্পর্কে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া গিয়েছিলো। এই বরাদ্দের মধ্যে আছে ৮০,০০০ নতুন হোম কেয়ার প্যাকেজ এবং আরো ৩৩,০০০ স্টাফ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী।  

নিম্ন ও মধ্য আয়ের কর্মী 

এবারের বাজেটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের চাকরিজীবীদের জন্য নতুন করে ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হবে। সরকার বলছে এতে ব্যক্তি ও যুগলদের জন্য যথাক্রমে ১,০৮০ ও ২,১৬০ ডলার করে সাশ্রয় হবে। এছাড়া ১.৭ বিলিয়ন ডলারের চাইল্ড কেয়ার পাকেজও রয়েছে। 

ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, গত বছরের মত এবারের বাজেটেও নিম্ন ও মধ্য আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ট্যাক্স অফসেটের সুযোগ দেয়া হয়েছে। করদাতারা এতে কমবেশি প্রায় এক হাজার ডলারের মত সাশ্রয় করতে পারবেন। 

কিছু খাতে জবসীকারদের জন্য সুবিধা  

জবট্রেইনার প্রোগ্রামের জন্য প্রায় অর্ধ-বিলিয়ন ডলারের সুবিধা থাকছে। এতে যেসব খাতে ব্যয় হবে তার মধ্যে আছে দুই লক্ষ ব্যক্তির জন্য ট্রেনিং ব্যবস্থা, বিশেষ করে এজেড কেয়ার এবং আইটি খাতের জন্য।

নারীদের শিক্ষানবীশ খাতে বেতন ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া আগামী চার বছরের জন্য ২৭০০ ইন্ডিজিনাস বালিকাদের জন্য ৬৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে যাতে স্কুল শেষ করে কর্মক্ষত্রে প্রবেশ করতে পারে।
Dr Tonmoy Choudhury, Lecturer, School of Business and Law, Edith Cowan University
Dr Tonmoy Choudhury, Lecturer, School of Business and Law, Edith Cowan University Source: Dr Tonmoy Choudhury
যারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন 

এবারের বাজেটে বেশ কিছু সেক্টরে বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

নতুন অভিবাসীদের কল্যাণ ভাতার জন্য চার বছর অপেক্ষা বা ওয়েলফেয়ার পেমেন্ট 

এবারের বাজেটে কল্যাণ খাতে বড়ো নতুন কোন ব্যবস্থা নেই। সরকার মার্চের শেষে দেয়া দৈনিক ৩.৫৭ ডলার করে অতিরিক্ত বরাদ্দ তুলে নিয়েছে। এছাড়া হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায় এবং কর্মীদের হতাশ করে মার্চের শেষে জবকীপার প্রোগ্রামেরও সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। 

এছাড়া নতুন অভিবাসীদের কল্যাণ ভাতার জন্য চার বছর অপেক্ষা করতে হবে। 

ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, আমি খুব অবাক হয়েছি নতুন অভিবাসীদের বিষয়ে এই ব্যবস্থা দেখে, তাদের করোনা কালীন এই সময়ে কল্যাণ ভাতা পেতে চার বছর অপেক্ষা করতে হলে পরিস্থিতি তাদের জন্য সংকটময় হয়ে উঠবে। 

শিল্পকলা খাত 

একইভাবে অস্ট্রেলিয়ার শিল্পকলা ও বিনোদন শিল্প খাতের জন্য বড়ো কোন ঘোষণা নেই। এই সেক্টরটি করোনাভাইরাসে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

যদিও গত মার্চে সেক্টরটির জন্য ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এবং গত বছরের জুনে ২৫০ মিলিয়ন ডলার প্যাকেজ বরাদ্দ করা হয়েছিল, কিন্তু খাতটি আশা করেছিল আরো সহায়তা পাবার।  

ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন 

যদিও সামগ্রিক শিক্ষাখাতে বেশ কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ আছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক শিক্ষাখাতে সরকারের বরাদ্দ মাত্র ৫৩.৬ মিলিয়ন ডলার।  

ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, এবারের বাজেটে ইউনিভার্সিটিগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি, আমরা ধারনা করেছিলাম আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাওয়ায় সংকটে থাকা ইউনিভার্সিটিগুলোকে আরও আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
অফশোর অভিবাসী 

এবছরের বাজেট ধারণা করছে মধ্য ২০২২-এর আগে হয়তো টেম্পোরারি এবং পার্মানেন্ট মাইগ্রেশন শুরু হবে না। যদিও কিছু আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্টেট এবং টেরিটরিগুলোর সাথে মিল রেখে ২০২১ সালের শেষ থেকে ধীরে ধীরে আসতে দেয়া হবে। 

তাছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে মাইগ্রেশন ক্যাপ আগের মতই আছে অর্থাৎ ১৬০,০০০ বছরে। তবে যারা অস্ট্রেলিয়ার ভেতর থেকে আবেদন করছেন ভিসা অনুমোদন হতে তাদের ভাগ্য হয়তো কিছুটা সুপ্রসন্ন হতে পারে। সরকার এক্ষত্রে অন-শোর এবং পার্টনার ভিসা আবেদনকারীদের অগ্রাধিকার দেবে বলে জানা গেছে।
The number of people able to migrate to Australia per year once borders reopen also hasn’t increased, with a cap of 160,000 set for 2021-22.
The number of people able to migrate to Australia per year once borders reopen also hasn’t increased, with a cap of 160,000 set for 2021-22. Source: Getty Images
ডঃ তন্ময় চৌধুরী মনে করেন, মাইগ্রেশন হার কমে গেলে তা অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে চলতি বছরে অভিবাসন সংখ্যা যা গৃহীত হয়েছে তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।

পরিবেশ 

পরিবেশবাদীদের হতাশ করে দিয়ে সরকার পরিবেশ রক্ষা কর্মসূচীতে বরাদ্দ কম দিয়েছে। আগামী দশ বছরে ১.২ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার করেছিল সরকার যাতে রিজিওনাল হাইড্রোজেন হাবসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা যায়, এর বাইরে মাত্র ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষা খাতে। 

ডঃ তন্ময় চৌধুরী বলেন, সরকারের এই খাতে কৌশল হচ্ছে লো-এমিশন টেকনোলজির উপর বিনিয়োগ, তাই রিনিউয়েবল এনার্জির দিকে তারা নজর দিচ্ছে না, তারা এক্ষেত্রে তাদের পূর্বের কৌশলে এগুচ্ছে।

বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই বাজেট কল্যাণমুখী ও প্রগতিশীল বলা হলেও অনেকেই কিছু কিছু সেক্টরে সরকারের বরাদ্দ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। 

তবে সার্বিকভাবে বাজেটের পর্যালোচনায় ডঃ তন্ময় চৌধুরী মনে করেন, এটি একটি কোভিডকালীন বাজেট - ভোক্তাদের চাহিদা অসীম, কিন্তু সরকারের সামর্থ্য সীমাবদ্ধ। তাই সবমিলিয়ে বাজেটটি মন্দ হয়নি। 

পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন। 

 শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের  ভিজিট করুন। 

আরো দেখুন:



 


Share