রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি সাময়িক

FILE- In this Thursday, Dec. 19, 2019 file photo, a man walks past buildings on Bhasan Char, or floating island, in the Bay of Bengal, Bangladesh. Authorities in Bangladesh have begun relocating thousands of Rohingya refugees to an isolated island despite

বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টিও তাদের এ দেশে আশ্রয় দেওয়ার মতো সাময়িক। Source: AAP Image/AP Photo/Saleh Noman

বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে রোহিঙ্গাদের একটি দল কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হলো। গত বৃহস্পতিবার তাদের ভাসানচরে নেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার বলছে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পুরো প্রক্রিয়া ছিল ঐচ্ছিক। যারা যেতে আগ্রহী, শুধু তাদেরই স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


হাইলাইটস

  • ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।
  • কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ইয়াবার রমরমা কারবার চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী।

তারা যে স্বপ্ন দেখেছিল, একটি ভাল পরিবেশে থাকার, সেটা তারা ভাসানচরে আপাতত পেয়েছে।
Mahadi Hasan
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর একটি দৈনিকের কূটনৈতিক প্রতিনিধি মাহ্দী হাসান ভাসানচরে অনেক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছেন। Source: Mahadi Hasan
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সাথে সেই যাত্রার সাথী হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর একটি দৈনিকের কূটনৈতিক প্রতিনিধি মাহ্দী হাসান। তিনি সেখানে অনেক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেছেন। ভাসানচর থেকে ফিরে এসবিএস বাংলাকে তিনি বলেন:

“আমি মূলত জানার চেষ্টা করেছি রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছেন কিনা। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সংখ্যাটা প্রায় পঞ্চাশের উপর হবে। কারণ, আমি সারাটা দিন তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা প্রত্যেকেই বলেছে, স্বেচ্ছায় গেছে।”

“ভাসানচরে পৌঁছার আগে যখন দূর থেকে দ্বীপটা স্পষ্ট হচ্ছিল, তারা সবাই আগ্রহ নিয়ে দেখেছে এবং ভিতরে পৌঁছার পর যে পরিবেশ তারা দেখেছে, যে পাকা দালান, রাস্তাঘাট, পানির ব্যবস্থা আছে, বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে, তারপর খেলার মাঠ আছে। এসব দেখে তারা খুবই খুশি হয়েছে।”

“আমি পরের দিন কথা বলেছি। প্রায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের ঘরে ঘরে গিয়েছি। তারা বলেছে যে, তারা বেশ খুশি। তারা যে স্বপ্ন দেখেছিল, একটি ভাল পরিবেশে থাকার, সেটা তারা ভাসানচরে আপাতত পেয়েছে।”
বেশ কিছু রোহিঙ্গা, যারা কিনা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, এসব রোহিঙ্গারা কিন্তু ভাসানচরে যেতে বাধা দিচ্ছে।
Tofayal Ahmad
কক্সবাজারের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রবীণ সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ বলেন,ভাসানচরে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছে, তাদের কাউকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার কথা আমাদের জানা নেই। Source: Tofayal Ahmad
এই স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ (আইএনজিও) স্বার্থান্বেষী কিছু মহল নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রকাশ্যেই বলেছেন, আইএনজিওগুলোই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মূল বাধা। আইএনজিওগুলো নিজেদের স্বার্থে কক্সবাজার ছেড়ে ভাসানচরে যেতে চায় না এবং রোহিঙ্গাদেরও নিরুৎসাহিত করে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও, রোহিঙ্গাদের মধ্যে থাকা একটি গ্রুপ এই স্থানান্তরে বাধা দিচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলেছি বাংলাদেশের কক্সবাজারের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রবীণ সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদের সাথে। তিনি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার দিন থেকে এ বিষয়ে নজর রাখছেন। তিনি এসবিএস বাংলাকে বলেন:

“আমরা স্থানীয় সাংবাদিকরা, আমরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যতদূর আলাপ-সালাপ করতে পেরেছি, তারা আমাদেরকে বলেছে যে, তারা স্বেচ্ছায় যাচ্ছে, কোনো জোর করে নেওয়ার ঘটনা আমাদের জানা নেই।”

“বেশ কিছু রোহিঙ্গা, যারা কিনা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত, এসব রোহিঙ্গারা কিন্তু ভাসানচরে যেতে বাধা দিচ্ছে।”

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য, পানীয়, স্যানিটেশন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের জীবন রীতিমতো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। একটি জেলার একটি অংশে ১ মিলিয়নেরও বেশি অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি দুর্বল অর্থনীতির দেশের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে অভিযোগ আছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অপরাধীচক্র রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নানা ধরনের অপরাধ নেটওয়ার্ক তৈরিতে তৎপর রয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসীরাও তাদের দলে টানার চেষ্টা করছে। আবার বেসরকারি সংস্থার ছদ্মবেশেও অনেকে অনেক রকম উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে অনেকবারই বলা হয়েছে, কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে ইয়াবার রমরমা কারবার চলছে। গড়ে উঠেছে ‘বাঙালি-রোহিঙ্গা’ সিন্ডিকেট। উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরগুলোকে ইয়াবা কারবারের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে এই মাদক পাচারকারীচক্র।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়টিও তাদের এ দেশে আশ্রয় দেওয়ার মতো সাময়িক। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ওপরই সরকার জোর দিচ্ছে।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .














































Share