রোড রেইজ: যেভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে যেতে হবে

Australia Explained - Road Rage

Credit: Jacobs Stock Photography Ltd/Getty Images

Get the SBS Audio app

Other ways to listen

রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় সামান্য বিরক্তি ক্রোধে রূপান্তরিত হয়ে আরও বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। এ কারণে সমস্যাজনক ড্রাইভিং চিনতে পারা জরুরি। কীভাবে রোড রেইজ বা রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় নিজের রাগ বা ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, সেটা জানা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এরকম হলে তা আপনার গাড়ির বীমার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানুন সিরিজের এই প্রতিবেদনে আমরা নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ড্রাইভিং এর উপায় সম্পর্কে জানবো, সেই সাথে আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য এরকম ঘটনার সামনে পড়লে কী পদক্ষেপ নিতে হবে সে সম্পর্কেও জানতে পারবো।


গুরুত্বপূর্ণ দিক:
  • আগ্রাসী ড্রাইভিং এবং রোড রেইজের পেছনে ব্যক্তিগত অথবা বাহ্যিক উভয় কারণই থাকতে পারে
  • আপনি যদি কোনও রোড রেইজের শিকার হন তবে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না
  • অন্য ড্রাইভার যদি ভুল করে থাকে তবে ক্রুদ্ধ না হয়ে শান্ত থাকুন
কোনো কারণে রাগান্বিত বোধ করা, বা ক্লান্ত, বিভ্রান্ত অথবা হতাশ বোধ করা খুবই সাধারণ ঘটনা যা সবার সাথেই ঘটে। তবে গাড়ি চালানোর সময় এরকম বোধ করলে তা নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে।

আক্রমণাত্নক বা সমস্যাজনক ড্রাইভিং এর পেছনে মূল কারণ চালকের রাগান্বিত বা হতাশ বোধ করা।

ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের স্কুল অব সাইকোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জেমস কারবি রোড রেইজের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।
Australia Explained - Road Rage
Impatient woman gesturing while driving car during rush hour in the city Credit: freemixer/Getty Images
মিডিয়া রিপোর্টে রোড রেইজের সবচেয়ে বেশি যে ঘটনাটি দেখা যায় তা হচ্ছে ড্রাইভাররা গাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য চালকের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।

প্রফেসর কারবি অবশ্য বলেছেন যে, এরকমটা সাধারণত হয় আক্রমণাত্নক ড্রাইভিং এর একদম শেষ পর্যায়ে এসে। এবং অনেকেই ক্রোধের বশে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গে অথবা মৌখিকভাবে ঝগড়া করে থাকে।

আর নিজের ড্রাইভিং স্কিল সম্পর্কে ভ্রান্ত উচ্চ ধারণা চালকের ক্রোধকে অনিরাপদ ড্রাইভিং-এর দিকে পরিচালিত করে থাকে।

রোড রেইজ আচরণের মধ্যে সাধারণত যেসব আচরণ দেখা যায় সেগুলো হলো, অন্যকে বিরক্ত বা বাধা দেওয়ার জন্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্রেক করা বা হঠাৎ গতি কমিয়ে দেওয়া, অন্য গাড়িকে ধাওয়া করা, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, অন্যান্য চালকদের নিজের পথ থেকে সরে যেতে গাড়ির লাইট বারবার জ্বালিয়ে ও নিবিয়ে সংকেত দেওয়া, এবং টেইলগেটিং করা।

জেমস উইলিয়ামস রয়্যাল অটোমোবাইল ক্লাব অব ভিক্টোরিয়া-র হেড অব পলিসি।

টেইলগেটিং সম্পর্কে পুলিশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, কেবল ভিক্টোরিয়া স্টেটেই টেইলগেটিং এর জন্যে প্রায় ২ হাজার চালককে জরিমানা করা হয়।
Australia Explained - Road Rage
Angry Middle Eastern man Attacking Another Driver Sitting In Car Credit: DjelicS/Getty Images
রোড রেইজ আলাদা করে কোনো অপরাধ নয়, তবে রেগে গিয়ে ক্রোধ প্রকাশ করলে তা সড়কে সবার নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।

উদাহরণস্বরূপ ভিক্টোরিয়া স্টেটে টেইলগেটিং এর অপরাধের জন্যে সাধারণত এক ডিমেরিট পয়েন্ট কাটা হয় এবং ২৪৮ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হয়।

মিস্টার উইলিয়ামস বলেন, কোনো রোড রেইজের ঘটনার সামনে পড়লে সবার আগে নিজের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।
Angry Woman Gestures in Car
Road rage in itself is an offence, however actions associated with aggressive driving compromising road safety are penalised. Credit: John W. Banagan/Getty Images
সম্ভাব্য রোড রেইজ পরিস্থিতির সামনে পড়লে শান্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ, এবং উত্তেজনা বাড়ার আগেই সেটিকে প্রশমিত করার জন্যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

আর কেউ যদি আপনার সাথেই আগ্রাসী ব্যবহার করে থাকে, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে নিজেকে শান্ত রাখা এবং সম্ভব হলে এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া।

এগুলো করার উপায় হচ্ছে অন্য ড্রাইভারকে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া, নিজে নিরাপদে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করা এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্যে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
Australia Explained - Road Rage
Cyclists and pedestrians are road users who are also potential targets of road rage behaviours. Credit: olaser/Getty Images
অস্ট্রেলিয়ায় দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া রোড রেইজের ঘটনার কোনো সরকারী পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে কম্প্যারিজন সাইট ফাইন্ডারের মতে, ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রতি চারজনে তিনজন অস্ট্রেলিয়ান রোড রেইজের অভিজ্ঞতা পেয়েছেন।

ফাইন্ডারের বীমা বিশেষজ্ঞ টিম বেনেট বলেন যে, রোড রেইজের ফলে গাড়ির ক্ষতি হলে সাধারণত বীমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে, এ ক্ষেত্রে সাধারণত দোষী ব্যক্তির বীমা কোম্পানি এই ব্যয় বহন করে থাকে।

কোনো রোড রেইজের ঘটনায় যিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন, সাধারণত তার বীমার প্রিমিয়াম বেড়ে যায়।

তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, যিনি দোষী নন, তার ক্ষেত্রেও বীমার প্রিমিয়াম বাড়ার ঘটনা ঘটতে পারে।
Australia Explained - Road Rage
You can try several strategies as a passenger to calm down the driver amidst a road age incident, but their effectiveness will depend on the nature and quality of your relationship. Credit: PixelsEffect/Getty Images
রোড রেইজে যে চালক আগ্রাসী ভূমিকা দেখায়, তার প্যাসেঞ্জার হিসেবে একই গাড়িতে থাকা খুব চাপের হতে পারে। কারণ এক্ষেত্রে নিজের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জেনেও কিছু করার উপায় থাকে না।

এসময় কোন কাজটি করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তা সাধারণত নির্ভর করে চালকের সাথে আপনার সম্পর্কের উপর।

প্রফেসর কারবি পরামর্শ দেন,
এ সময় কাম ডাউন বা ‘শান্ত হও’ ধরণের কথা না বলাই ভাল, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই কথা উলটো প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে।

বরং অন্য কোনো কথা বলে চালকের মনোযোগ সরিয়ে ক্রোধ কমানো যায় কিনা সে-চেষ্টা করা যেতে পারে।
Australia Explained - Road Rage
If a person consistently engages in road rage behaviour, psychological therapy can help them deal with the management and expression of their anger, Prof Kirby says. Source: Moment RF / Fiordaliso/Getty Images
প্রফেসর কারবি বলেন, কেউ যদি বারবার রোড রেইজে সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তার জন্যে মনস্তাত্বিক থেরাপির মাধ্যমে রাগ কমিয়ে আনা অথবা ক্রোধ প্রকাশে সংযত হওয়ার উপায় সম্পর্কে জানানো যেতে পারে।

সড়কে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল ড্রাইভিং এর জন্যে প্রয়োজন সর্বোচ্চ মনোযোগ, ধৈর্য এবং বিবেচনাবোধের সর্বোত্তম স্তরে থাকা।

প্রফেসর কারবি বলেন, নিজে সতর্ক থাকা, অপর চালকের পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করে সহজেই রেগে না যাওয়া সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সঠিক উপায় হতে পারে।

সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন

রাস্তায় কোনো ঘটনায় অনিরাপদ বোধ করলে পুলিশে কল করুন

আগ্রাসী আচরণ বা খারাপ ড্রাইভিং রিপোর্ট করতে ক্রাইমস্টপার্সের নম্বরে কল করুন: 1800 333 000.


Share