হিটওয়েভের অভিজ্ঞতা ও অভিযোজন: ভিক্টোরিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির অভিজ্ঞতা

Beachgoers in Australia

হিটওয়েভ এডাপ্টেশন তথ্য সহজে পাওয়া যায় না Source: AAP

বাংলাদেশ মূলত একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশ এবং এর আবহাওয়া অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশ আলাদা। এই প্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের হিটওয়েভের অভিজ্ঞতা কি? - মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ জিওগ্রাফির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমফিল গবেষক দিলরুবা খানম উত্তরটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি এসবিএস বাংলার সাথে তাঁর প্রকল্প ‘হিটওয়েভের অভিজ্ঞতা ও অভিযোজন: ভিক্টোরিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটির অভিজ্ঞতা' নিয়ে কথা বলেছেন।


দিলরুবা খানম তার গবেষণা সম্পর্কে বলেন, তিনি হিট ওয়েভ কিভাবে ভিক্টোরিয়ার বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রভাবিত করে এবং এটির সাথে অভিযোজনে তারা কি পদক্ষেপ নেয়, তা জানার চেষ্টা করছেন।

"তাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি তাপমাত্রার প্রভাবের মূল্যায়ন, কিভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন, সে বিষয়গুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। এছাড়াও হিট ওয়েভ অভিযোজনের প্রতিবন্ধকতা কি তাও অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি।"

"আমরা যুক্তি দিচ্ছি যে, অভিবাসীদের বিশেষ সাংস্কৃতিক-সামাজিক অভিজ্ঞতা, পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা জ্ঞান, দক্ষতা এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য।"
Bangladeshi Migrants in Victoria
দিলরুবা খানম বাংলাদেশী অভিবাসীদের হিটওয়েভ এডাপটেশন নিয়ে গবেষণা করছেন Source: সংগৃহিত
মিসেস দিলরুবা জানান, এ গবেষণার জন্য ৩৯৩ জনের মধ্যে সার্ভে করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭৩টি বিষয় ছিল যার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের হিট ওয়েভের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও সার্ভে প্রশ্নের বাইরে ২০টির মত সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে যেখান থেকে আরো অনেক তথ্য জানা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা কি কি পদ্ধতি ব্যবহার করেছে হিট ওয়েভের সাথে খাপখাইয়ে নেয়ার জন্য  এবং সে ক্ষেত্রে কি কি বাধা আছে।

"একটা গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হচ্ছে ৬৩ ভাগ উত্তরদাতা বৈশ্বিক উষ্ণতা, হিট ওয়েভ তথা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কিভাবে এটি তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে প্রভাবিত করছে সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন।"

তিনি জানান, অনেক অংশগ্রহণকারী অতিরিক্ত তাপমাত্রার সাথে খাপ খাওয়াতে তাদের আরো তথ্য জানা দরকার বলে মনে করেন, বিশেষ করে এটি কিভাবে তাদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে প্রভাব ফেলে এবং তার থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তারা জানতে চান।

বাংলাদেশী অভিবাসীরা গরম থেকে বাঁচতে সিলিং বা প্যাডেস্টাল ফ্যান ব্যবহার করেন, ঘরের ভেতর দরজা, জানালা খুলে দেন কিন্তু বাইরে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলে যান-এ বিষয়ে মিসেস দিলরুবা মনে করেন এটি তাদের পূর্বের সামাজিক অভ্যাস যা অনেক সময় অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়, “এটি বরং হিট ওয়েভ এডাপটেশনের বিপরীত ”।

"অনেক বাড়িতে ইনসুলেশন সিস্টেম বা এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম নেই, সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা যখন ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে এবং ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা বাড়ে এ সময় যখন ফ্যান ব্যবহার করা হয়, তখন সেই গরম তাপ ঘরের ভেতরই সার্কুলেট করছে, তাই এটি শরীরকে শীতল করতে কোন সাহায্য করবে না। এ ক্ষেত্রে যাদের অন্য কোন উপায় নেই তখন তারা একটি পাত্রে বরফ বা বরফ শীতল ঠান্ডা পানি ফ্যানের পেছনে রাখতে পারেন - এ বিষয় গুলো অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষিতে জানার বিষয় যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন। কারণ বাংলাদেশে গরম পড়লেও বাতাসের আর্দ্রতা বেশি, শরীরে ঘাম হয়, তাই ফ্যান ব্যবহার করলে সহজেই শরীরকে শীতল করবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া শুষ্ক, এ ক্ষেত্রে এডাপটেশনের পদ্ধতিও ভিন্ন।"

তিনি বলেন, একটি দেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে জলবায়ুর এই বিষয়গুলো এবং অভিযোজনের পদ্ধতিগুলো জানা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ সেটিই তার গবেষণার মূল বিষয়।

তবে একটি বিষয় তার গবেষণার টিম লক্ষ্য করেছে যে, হিট ওয়েভ এডাপ্টেশন তথ্য যত সহজে পাওয়া যায় বলে তারা মনে করেছিলেন তত সহজে পাওয়া যায় না। তবে কমিউনিটিতে যোগাযোগ ভালো হওয়ায় অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে এ বিষয়ে খোঁজ খবর পান।

হিটওয়েভের স্বাস্থ্যগত প্রভাব সম্পর্কে তার গবেষণায় যা পেয়েছেন সে সম্পর্কে তিনি  বলেন, অনেকে অভিবাসীরই মাইগ্রেন, বমি হওয়া, মুড চেঞ্জ, শারীরিক দুর্বলতা, মনোযোগে  বিঘ্ন ঘটা, স্কিন বার্ন, মাথা ব্যথা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, হাইপারটেনশন, মাথা ঘোরা ইত্যাদি হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা।

তবে বাংলাদেশী অভিবাসীদের পূর্ববর্তী সামাজিক বা বিশেষ সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, অভ্যাস এবং সক্ষমতা যেমন, গরমে এলকোহল সেবন না করা, দ্রুত গোসল করা, গরম পড়লে ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলা, ইত্যাদি ব্যাপারগুলো হিট ওয়েভ অভিযোজনে বেশ কাজে লাগছে।  

পুরো অডিওটি শুনতে ওপরের প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন

আরো পড়ুন:



 


Share